Published on – Sunday, November 23, 2025
এখন ভাদ্র মাস
প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র
বোসপাড়ার গব্বর বোসপাড়ায় তান্ডব করে বেড়ায়। সারা পাড়া গববরের দলের ভয়ে তটস্থ। পচা, কেলটে, গোবলু, সুন্দরী, লালি এরাও ওকে বেশ সমীহ করে ওর দলের সঙ্গী হয়েছে। কারুরই গব্বরের মুখের উপর কথা বলার ক্ষমতা নেই। একটু অন্যায় করলেই গব্বর অন্যান্যদের কামড়ে আঁচড়ে শতচ্ছিন্ন করে দেয়। ও ছুটলে অন্যান্যদের ওর সাথে ছুটতে হয়। গব্বর ঘুমালে অন্যদেরও ঘুমাতে হয় ইচ্ছা না থাকলেও।
পাড়ার সব বাড়ির এঁটো খাদ্য আগে গব্বর খাবে তারপর অন্যান্যরা। কখনো কখনো গব্বরের অন্যতম প্রধান বন্ধু লালি একসাথে খাবার সুযোগ পায় ঠিকই কিন্তু তাতেও গব্বর গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলে নিজের রাগের বহি:প্রকাশ করে। এইভাবেই প্রায় বছর ৯ গববরের রাজত্ব চলেছে একছত্র।
কিন্তু ওই , কারুর সময় একভাবে যায় না, কথাতেই আছে। গব্বরের হচ্ছে। অন্যান্যরা গব্বরের অত্যাচার এত দিন মুখ বুজে সহ্য করলেও অনেকেই এখন প্রতিবাদ করছে। এটা গব্বর প্রথম প্রথম বুঝলেও তেমন একটা পাত্তা দেয় নি। পাত্তা দিলে হয়ত আরো কিছুদিন বোসপাড়ায় রাজত্ব করতে পারত।
কিন্তু ওই, সময় সব থেকে ভালো শিক্ষক। কোথা থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় “ভাদ্র” মাস এলো। এদিকে গব্বরেরও স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে। আগের মত তেজ গর্জন ও আর নেই। লালি কিছুটা বয়সে ছোট ও ধীর স্থির শান্ত স্বভাবের। পাশের পাড়ার ঘেন্টার অনেক দিন ধরেই লোভ লালির উপর। কিন্তু বোস পাড়ার ধারে কাছে এলেই ওকে গব্বর তাড়া করে। পেরে ওঠে না গব্বর ও ওর দলবলের সাথে।কিন্তু অনেকদিন ধরেই তাক করে আছে গববরের উপর।সুযোগ পেলেই দেখে নেবে।
হঠাৎ ই সুযোগ । আজ ঘেন্টার পাড়ায় বিয়েবাড়ি। হালকা হাওয়া দেওয়ায় বিরিয়ানির গন্ধ বোস পাড়ার দিকে যাওয়ায় গব্বর নিজের লোভ সামলাতে পারছে না।
দুপুর থেকেই বিরিয়ানি, চিকেন চাপ, মর্টনের গন্ধ ভেসে আসছে বোস পাড়ার দিকে। একটু সন্ধ্যা হতেই গব্বর লালিকে সঙ্গে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে যায় মিত্রপাড়ায়। দূর থেকে ঘেনটা দেখে লালিকে।
আজ খুব সুন্দর লাগছে লালিকে। একটু সাজুগুজুও করেছে বেশ।সানাইয়ের আওয়াজ কানে আসছে গব্বরের। কিন্তু যেই গব্বর প্যান্ডেলের কাছে আসে, অমনি কোথা থেকে ঘেন্টা দলবল নিয়ে এট্যাক করে গব্বর কে। গব্বরকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে হাই ড্রেনে ফেলে। লালিকেও -মিত্রপাড়ার নেড়ি তাড়া করে। লালি তো লেজ গুটিয়ে এক দৌড়ে সোজা বোসপাড়ায়।
অনেক রাতে গব্বর রক্তাক্ত হয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আসে। এদিকে ততক্ষনে লালি হাতছাড়া হয়েছে। ঘেন্টা দখল নিয়েছে লালির। পাড়ার অন্যান্যরাও বশ্যতা মেনেছে ঘেন্টার।
গব্বর যেই লালির কাছে একবার যেতে গেল, অমনি ঘেন্টা গর্জন করে উঠল।
মনের দুঃখে সকালে গব্বর একবার স্থানীয় থানায় গেল বটে। কিন্তু গিয়ে দেখে সেখানেও দখল নিয়েছে ঘেন্টা।
মনে মনে ভাবে সবই পরিবর্তন । সময়ের সাথে সাথে কত কিছুই বদলে যায়। ক্ষমতা চলে গেলে থানা পুলিশও শাসকের হয়ে কথা বলে। শাসকের পক্ষ নেয়। অতীতের সেই ক্ষমতা আজ আর নেই গব্বরের। অথচ এই ঘেন্টা একদিন কেমন কেঁচোর মত থাকত । সময়ের কারণে আজ ঘেন্টা শের, আর আমি হয়ে গেলাম কেঁচো।
গব্বর ফিরে আসে থানা থেকে। আর ভাবে আবার সময় এলে দেখা যাবে। এখন বরং নিদ্রা মগ্ন হওয়াই মঙ্গলের।
