মন্দির শিল্প ও টেরাকোটা
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা তথা বাঙালির সমাজ , ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে যিনি সম্পূর্ণ এক নতুন ধারায় প্রবাহিত করে লুপ্ত হয়ে যাওয়ার থেকে বাঁচিয়েছিলেন তাঁর মনন ও মনীষার উৎকর্ষতার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালির একান্ত গৌরাঙ্গ শ্রীচৈতন্যদেব ৷ আজ থেকে যদি আমরা ছয় শত বছর পিছিয়ে যাই তবে এই বাংলায় সে সময় ব্রাহ্মণ্যবাদের কঠোর পেষণ , সামাজিক ঘৃণা , অবজ্ঞা , বিদ্বেষ , সর্বোপরি অমানবিক আচরণে ব্রাত্য অবহেলিত অধিকারহীন হিন্দু সমাজের এক বৃহত্তর অংশ শিষ্ট সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল ৷ ফলে নিন্মবর্ণের হিন্দু সমাজের একাংশ ইসলামের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিল ৷ (বঙ্কিম রচনাবলী — যোগেশ চন্দ্র বাগল সম্পাদিত , ২য় খণ্ড , পৃ ২৯৩ ) এর ফলে বাংলার মুসলমানের সংখ্যা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ (বঙ্গে বৈষ্ণব ধর্ম — রমাকান্ত চক্রবর্তী , পৃ. ২৬ ) এদেশে ইসলাম জনসংখ্যার অধিকাংশটাই যে ধর্মান্তরিত হিন্দু সমাজের অংশ , সমাজবিজ্ঞানীরা তা স্বীকার করেছেন ৷ ( Hinduism and Islam in Mediaeval Bengal — E.C. Dimock , P- 10 ) এ সম্পর্কে অবশ্য স্মৃতিকারেরা ছিলেন সম্পূর্ন ঊদাসীন ৷ ধর্মান্তর রোধ করার জন্য সেদিন তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি ৷ মধ্যযুগে হিন্দু শিষ্টবর্গীয়দের একটি ধারা যাগ যজ্ঞ , পূজার্চনা ও ধর্মীয় ক্রিয়াকান্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন এবং শাস্ত্রচর্চায় সময় অতিবাহিত করতেন ৷সমাজে এঁদের প্রভাব ছিল অপরিসীম ৷ সাধরণ মানুষ এঁদের যেমন ভক্তি করতেন তেমনি ভয়ও করতেন ৷ ফলে সাধারণ মানুষের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যাহত হত , বিশেষ করে শুদ্ররা সমাজে একেবারে ছিল অপাংতেয় ৷ ফলে সমাজে যে দ্রুত অবক্ষয় চলছে তা বোঝার ক্ষমতা এই বাংলার স্মৃতিকারদের ছিল না ৷ বুঝেছিলেন চৈতন্যদেব ৷ মধ্যযুগে জন্মেও তিনি ছিলেন আধুনিক , কুসংস্কারহীন এবং মুক্ত মনের মানুষ ৷
